#আল্লাহকে পাওয়ার উদ্দেশ্যেই একমাত্র কুরবানী: তাৎপর্য পূর্ণ ফজিলত..........
#কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রয়াস মানুষের অতি প্রাচীন। কুরবানী ও উৎসর্গের রেওয়াজ আদী পিতা হযরত আদমের (আ:) যুগ থেকেই শুরু । তার দুই পুত্র হাবীল ও কাবীলের কুরবানীকেই বিশ্বের প্রথম কুরবানীর ঘটনা বলে চিহ্নিত করা হয়। বিষয়টি পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদায় বিস্তারিত এসেছে।এরপর থেকে দুনিয়ার সব কটি ধর্ম ও মতাদর্শে কুরবানীর ঐতিহ্য লক্ষ্য করা যায়।
আজ আমরা যে কুরবানীর উৎসব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তা প্রায় চার হাজার বছর আগের দুই মহান পয়গাম্বরের নজীরবিহীন আত্মত্যাগ সম্পর্কিত ঘটনার স্মারক। তারা হলেন, বিশ্বের তিন প্রধান ধর্মাবলম্বী ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের আদি পুরুষ হযরত ইবরাহীম ও তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ:)।
যীশুখৃষ্ট (ঈসা আ:) এর প্রায় দুহাজার বছর পূর্বে ইরাকের প্রাচীনতম শহর ‘উর ’- এ জন্ম গ্রহণ করেন জগদ্বিখ্যাত নবী ইবরাহীম – (আনওয়ারে আম্বিয়া, ইফা)। রাজ পুরোহিত পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি ছিলেন খোদা লা- শারীকের এক অবিচল বিশ্বাসী বান্দা ও মজনু।প্রিয়জনকে আল্লাহ বেশী পরীক্ষায় ফেলেন। ইবরাহীমের জন্যও অনেক পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন তিনি। সব কটি পরীক্ষায় ইবরাহীম সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু একটি পরীক্ষা রয়ে যায়, যাতে উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ইব্রাহীম খোদা তায়ালাকে দুনিয়ার সবকিছু অপেক্ষা ভালবাসেন কিনা তার প্রমাণ মিলতো না। তাই নির্দেশ হলো, বৃদ্ধ বয়সে তোমার যে ফুটফুটে সন্তান রয়েছে তাকে আমার নামে কুরবানী দাও…….।’
ইব্রাহীম সামান্যও কুন্ঠিত হলেন না। তিনি বলে উঠলেনঃ প্রভু! তোমার ইচ্ছেই পূর্ণ হোক। কিন্তু তিনি যাকে কুরবানী দেবেন তার মনের অভিপ্রায়ও জেনে নেয়া জরুরী মনে করলেন। ইসমাঈলকে তিনি পরম স্নেহে ডেকে নিয়ে বললেনঃ মানিক আমার! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবেহ করছি। এখন তোমার অভিমত কি বল? ইসমাঈল জানেন, তার পিতা একজন মহান পয়গাম্বর। তার কথা কখনো গুরুত্বহীন নয়, তার কথায় খোদা তায়ালার নির্দেশ ও সন্তুষ্টি নিহিত। তাই তিনি অতি দৃঢ়তার সাথে আরজ করলেনঃ ওহে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভূক্ত পাবেন।- (সূরা সাফফাতঃ১০২)।
মায়ের বুক খালি করে সন্তানকে কুরবানীর জন্য নিয়ে চলেছেন নবী ইব্রাহীম। পিতা-পুত্রের এ নজীরবিহীন ত্যাগ ও কুরবানীর মনোভাব দেখে সকলে হতবাক। মিনা প্রান্তরের তপ্ত বালিতে শুইয়ে সন্তানের গলায় সুতীক্ষè ছুরি চালালেন তিনি।
পিতা পুত্র দু’জনই যখন চোখ বাঁধা! হঠাৎ গায়েবী আওয়াজ আসলো। থামো, হে ইব্রাহীম! যথেষ্ট হয়েছে। ক্বাদ সোয়াদ্দাক্তার রু-ইয়া নিশ্চয় তুমি তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দান করলে।’ তুমি উত্তীর্ণ হলে তোমার পরীক্ষায়!
এরপর ইব্রাহীম চোখ খুললেন পরম আত্মতৃপ্তিতে। কিন্তু এ’কি তিনি দেখছেন! ইসমাঈল তার পাশেই দাঁড়িয়ে এবং তার স্থলে জবেহ হয়ে আছে একটি বেহেস্তী দুম্বা। দু’জনেই আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় মুনাজাত করলেন।
দিনে দিনে এ অভাবিতপূর্ণ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লো বিভিন্ন স্থানে। যুগের পয়গাম্বরের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং আল্লাহ তায়ালার সšু‘ষ্টি লাভের মানসে অনেকে পশু কুরবানী শুরু করেন। যা আজো অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তীতে এ দুই মহান নবী খানায়ে কা’বা আবিষ্কার করেন- যা ফেরে¯তা এবং আদম (আ:) কর্তৃক বহু আগে নির্মিত হয়েছিল এবং নূহ নবী (অ:) এর আমলের বিখ্যাত প্লাবনে মাটি চাপা পড়ে গিয়েছিল। আল্লাহ পাক পবিত্র খানায়ে কা’বাকে মানুষের গুনাহ মাফি, শান্তি ও নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দু রূপে নির্ধারিত করলেন এবং ইবরাহীম -ইসমাঈলের অপরূপ জীবন কাহিনী , ত্যাগ ও দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রভূমি মক্কাকে চির মর্যাদাকর করে রাখলেন হজ্জের অনুষ্ঠানমালা প্রবর্তনের মাধ্যমে। ঈদুল আযহা তারই প্রেক্ষাপটে গোটা উম্মাহর স্মরণ উৎসব।
হজ্জ ও কুরবানীর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির তুলনায় দুুনিয়ার পাওনাকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে শেখে। এর মাধ্যমে আল্লাহতে অবিচল অবস্থার সৃষ্টি হয়্য। তার জন্য জান মাল যে কোন কিছু উৎসর্গ করতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়। হজ্জ ও কুরবানী মিল্লাতের পিতা ইব্রাহীমের (আ:) আদর্শ ও শিক্ষায় তাওহীদবাদী মুসলমানদের উজ্জীবিত করে। এতে প্রতিবছর তারা ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে এবং ঐতিহ্যকে আকড়ে থাকার শপথবদ্ধ হয়।
হজ্জ ও কুরবানী অনুষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা বর্ণ ও ভাষার মুসলিম জাতিকে এক অভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়ে থাকে। এর ফলে পরস্পরের মধ্যে মত বিনিময়ের মাধ্যমে তারা বিকৃতি ও আকীদাগত বিভ্রান্তি দূর করতে পার্।ে ঈদুল আযহা মুসলমাদের কাছে উন্মোচিত করে একজন সন্তানের প্রতি একজন পিতার স্নেহ ভালবাসা ও অধিকারের বিষয়; একইভাবে একজন যোগ্য সন্তান কি পরিমাণ আনুগত্যের পরাকাষ্টা দেখাতে পারে পিতা মাতা ময়মুরুব্বীদের উদ্দেশ্যে।
পবিত্র হজ্জের মিলনমেলা এবং ঈদুল আযহার অন্তর্নিহিত দর্শন আমাদের সকলকে আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনে, সত্য ও ন্যায়ের জন্য আত্মোৎসর্গে এবং সাম্য মৈত্রী আধ্যাত্মিকতায় অনুপ্রাণিত করুক এ কামনা আজকে। আমাদের দেশে ঈদের একটি সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার বিষয় আছে। এখানে মুসলিম জাতির পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য কিছু জাতি বসবাস করে। তাদের সামনে আমাদেরকে ঈদের মাহাত্ম্য আন্তরিকতার সাথে তুলে ধরতে হবে। এমন কোন আচরণ এ সময় প্রদর্শন করা উচিত নয়, যা আমাদের ধমর্, আমাদের ঈদ ও ইবাদত পর্ব নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে।
যেমন কুরবানীর পশুর বাজারের নামে যত্রতত্র রাস্তাঘাট দখল করা, ময়লা আবর্জনায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস তোলা। কুরবানীর পরবর্তীতেও আমরা পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা ভুলে যাই । যত্রতত্র মলমূত্র হাঁড়, উচ্ছিষ্ট, রক্ত গন্ধ আমাদের সমাজে স্বাভাবিক বসবাস যোগ্যতা বিঘ্নিত করে। যা কারো জন্য শোভনীয় নয়। এ বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিলে সত্যিকার অর্থে ঈদ আনন্দের, ঈদ উপভোগের, ঈদ শিক্ষা ও সামাজিক মজবুত বন্ধনের। আর পবিত্র ঈদুল আযহা ত্যাগের মহিমায় চির ভাস্বর হয়ে আছে আমাদের মাঝে।
বি:দ্র: - আরোও কিছু লেখার ছিল................ আর একদিন বলা যাবে। ইনশা আল্লাহ।
No comments:
Post a Comment