Translate

Monday, April 27, 2020

#সেহরি সঠিক ভাবে পালনে, আমাদের করনীয় কি?




লেখক: মো: সাদ্দাম হোসাইন

#সেহরি বা সেহেরি বা সাহরী (আরবীতে سحور‎, প্রতিবর্ণী শব্দসুহুরবাংলা অর্থ হলো:  'ঊষার পূর্বের খাবার'‎; সেহেরী ও বলা হয়ে থাকে) হল মুসলিমদের দ্বারা গৃহীত ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা রমজান মাসে অথবা যে কোন দিন সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ফজরের নামাজ বা ঊষার পূর্বে খাবার গ্রহণ করা হয়।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে---
#রোজা (صوم) পালন করার উদ্দেশ্যে রাত্রের ৩য় ভাগে পানাহার করাকে সাহ্রি বলা হয়। এটি একটি বরকতময় সুন্নাত। তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি/সান্বিধ্য অর্জনের জন্য এর গুরুত্ব ফজিলত অনেক।

#হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন: নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা সেহ্রি খাও, কেননা সেহ্রিতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি, সওম-এর অধ্যায়, হাদিস নং: ১৮০১)
#হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘আমাদের রোজা আর আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহ্রি খাওয়া আর না খাওয়া।’ (মুসলিম শরীফ)।
#মোল্লা আলী কারী (.) বলেন, ‘অর্ধ রাত্রি হতে সাহ্রির সময় শুরু হয়।’ (মিরকাত শরহে মিশকাত)
#হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহ্রি খাও; যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয় অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘তোমরা সেহ্রি খাও; যদি এক লোকমা  খাদ্যও হয় (মুসলিম) অর্থাৎ যেকোনো প্রকার যেকোনো পরিমাণ খাদ্য বা পানীয় দ্বারাই সেহ্রির সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।

রোজা রাখার জন্য সেহ্রি সহায়ক, সেহ্রির সময় জাগ্রত হওয়া রোজার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। সেহ্রির  সময় আরামের ঘুম  ত্যাগ করে জাগ্রত হওয়া প্রকৃতই ইবাদত আনুগত্যের প্রতি অনুরাগ। এতে শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস হয় এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সৌভাগ্য লাভ হয়।
সেহ্রির সময় জাগ্রত হওয়া এক প্রকারের মুজাহাদা বা সাধনাও বটে। এই সময় আল্লাহর রহমত নাজিলের সময়, অগণিত আল্লাহ প্রেমিকের ফরিয়াদ দোয়া কবুলের সময়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাপেক্ষা উত্তম সময়। যাঁরা এই বরকতময় সময় জাগ্রত হয়ে আল্লাহর মহান দরবারে দোয়া করে থাকেন এবং ইস্তিগফার বা মাগফেরাত কামনা করেন, আল্লাহ তাঁদেরকে নিজ ভালোবাসায় ধন্য করেন। এ সমস্ত আল্লাহ প্রেমিকদের দিকে লক্ষ করে পবিত্র কোরআনুল করিমে মহান রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন:-  তারা (ইমানদারগণ) রাত্রির শেষ অংশে আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করে থাকে। (সুরা যারিয়াত, আয়াত নং- ১৮)

বরকতময় সেহ্রির কল্যাণকর নানান দিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো:- (১) সুন্নাতের অনুসরণ করা, (২) ইসলামের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা, (৩) ইবাদতের জন্য শক্তি এবং তাকওয়া অর্জন করা, (৪) স্বাস্থ্য মনের অধিক প্রফুল্ল লাভ করা, (৫) ক্ষুধার তাড়নায় সৃষ্ট প্রবৃত্তির বাসনা নিবারণ করা।
সেহ্রির সময়টুকুতে দোয়া কবুল হয়ে থাকে, সময় অধিক পরিমানে জিকিরআসকার করা এবং তাহাজ্জুদ-এর নামাজ আদায় দোয়া-মোনাজাতের অনন্য সুযোগ। ইচ্ছাকৃতভাবে সেহ্রি বর্জন করা সুন্নাতের খেলাফ।

অধিক হালাল খাদ্য হালাল উপার্জন এ রোজা, নামাজসহ যাবতীয় ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত। তাই সেহ্রি ও ইফতারে বৈধ উপার্জনের হালাল খাবার প্রয়োজন।
যদি কখনো অবস্থা এমন হয় যে ফরজ গোসল করে সেহ্রি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকে; তখন অজু করে বা হাতমুখ ধুয়ে আগে সেহ্রি খেয়ে নিবেন। তারপর গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করবেন। কারণ, সেহ্রি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয় বরং সুন্নাত। আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজ। গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করে নিতে হবে। বিনা ওজরে বেশি সময় অপবিত্র অবস্থায় থাকা উচিত নয়। আর রমজানে রোজা অবস্থায় অধিকক্ষণ অপবিত্র থাকা মোটেও সমীচিন নয়, এটি মাকরুহ।

সেহ্রি খাওয়া সম্ভবপর না হলেও রমজানের ফরজ রোজা রাখতে হবে। নিজেরা সেহ্রি খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, অভাবীঅসহায় মানুষের সেহ্রির বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে।
#রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তৃপ্তিসহ পেট পুরে পানাহার করল, তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত যাপন করল, সে মুমিন নয়।’ (মুসলিম)

আমাদের মনে রাখতে হবে, রমজান যেন ভোজের আয়োজনে পরিণত না হয়। সেহ্রিতে স্বাস্থ্যসম্মত আহার গ্রহণ করা কাম্য, অধিক পরিমাণে তরল পানি জাতিয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। খাদ্যের গুণাগুণ মান যাচাই করে নেওয়া ভালো। প্রয়োজনীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শমতো গ্রহণ করতে হবে।

#আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানের সকল রোজাগুলো সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক
দান করুন। আমিন।
#ভালো থাকুন; সুস্থ থাকুন।