#আসসালামু
আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সম্মানিত ভাই ও বোনেরা আজকে
প্রায় ৫ মাস পর
একটি বিষয়ের সম্মুখীন হওয়াতে বা একটি প্রশ্নের
উত্তরে আমি একটি ব্লগ উপস্থাপন করতে যাচ্ছি,যার বদৌলতে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা গুলো ঠিক হতে পারে ইনশা আল্লাহ:
১। আলেম
ও দ্বীনদার মানুষকে
বা, মসজিদের ইমামকে
‘হুজুর’ বলা যাবে
কি না?
উত্তর:
‘হুজুর’ (هجور) শব্দটি
আমাদের এই সমাজে বা
দেশে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। সাধারণত আমরা বিজ্ঞ
আলেম, মসজিদের ইমাম ও দ্বীনদার-পরহেযগার
মানুষদেরকে ‘হুজুর’ বলে সম্বোধন করে থাকি।
নিম্নে
এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে বিশ্লেষণ করা হল:-
শাব্দিক অর্থ:
১. উপস্থিত
হওয়া,
২. জনাব,
৩. মহাশয়,
৪. মহোদয়,
৫.
স্যার।
৬. বি.
নৃপতি,
৭. বিচারপতি,
৮. মনিব
প্রভৃতি।
পারিভাষিক অর্থ:
১।
হুজুর শব্দটি, এটি সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।”
(ফার্সী
অভিধান গিয়াসুল লুগাত, পৃষ্ঠা/১৭৪)।
২।
জমহুর ওলামাইকেরাম বলেন- সমাজ বা দেশের বিজ্ঞ
আলেম, দ্বীনদার শ্রেণীর লোক বা, পীর মাশায়েখদের সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দটিই হলো হুজুর।
৩।
পূর্ব যুগে রাজা-বাদশাহ, বিচারপতি,
মনীব প্রমূখ ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ‘হুজুর’ বলে সম্বোধন করার রীতি প্রচলিত ছিল।
বিশ্লেষণ-
বাংলা
ভাষায় অর্থবহ শব্দ যেমনিভাবে জনাব,
মহাশয় সম্মানসূচক শব্দ তেমনিভাবে হুজুর
শব্দটিও ফার্সী, উর্দু ও বাংলা ভাষায়
একটি অর্থবোধক সম্মানসূচক শব্দ। যা সাধারণভাবে দ্বীনদারী
লোক, আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, ০৩ (তিন) ভাষার অভিধান গ্রন্থগুলো দেখলেই এ কথা স্পষ্ট
হয়ে যায়। মেছাল- ফার্সী অভিধান গিয়াসুল
লুগাতে
(পৃ.
১৭৪)
দেখুন : ‘‘হুজুর শব্দটির অর্থ হল, উপস্থিত হওয়া। তবে পরিভাষায় এটি বুযুর্গ ব্যক্তিদের সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।’’ এই একটি কথায়
উর্দু অভিধান ফীরুযুল
লুগাত
(পৃ.
৫৭১)
এবং বাংলা অভিধান বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা
অভিধান
(পৃ.
১২১২)
ও সংসদ
বাংলা
অভিধান
(পৃ.
৭২৩)
এতে উল্লেখ করা হয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক অভিধান ebanglalibrary.com এ হুজুর (Hujura) শব্দটির
ব্যাপকারে অর্থ বিশ্লেষন করা হয়েছে। উপরোল্লেখিত অভিধানগুলোর আলোকে এ কথাই স্পষ্ট
হয় যে, হুজুর শব্দটি ফার্সী, উর্দু ও বাংলা ভাষায়
নিছক একটি সম্মানসূচক শব্দ। আর এ অর্থেই
এই তিন ভাষার অনেক মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যও এটি
ব্যবহার করে থাকে। শরয়ী পরিভাষা হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয় না। শব্দটি যেহেতু ব্যাপক তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য তা
ব্যবহার করা হলেও সাধারণত অধিক সম্মান বোঝানোর জন্য এর সাথে আকরাম
শব্দ যোগ করে হুজুরে আকরাম
বলা হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে হুজুর শব্দটি ব্যবহৃত হলেও এখানে মূলত তাঁকে সম্মান দেখানোর নিমিত্তে তার শানে এ শব্দটি প্রয়োগ
করা হয়।
তবে
কেউ যদি এ শব্দটির শাব্দিক
অর্থের দিক থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বত্র হাজির-নাজির মনে করে তার শানে এই শব্দ ব্যবহার
করে তাহলে নি:সন্দেহে তা
জায়েয নয়। কেননা, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাজির তথা সর্বত্র উপস্থিত, তিনি সব কথা শুনেন,
জানেন ইত্যাদি বিশ্বাস থাকা শিরক। এগুলো একমাত্র আল্লাহর গুণ। আল্লাহ তায়ালার মত আল্লাহর নবীও
সব জায়গায় বিরজমান, সব জায়গায় হাজির
থাকার বিশ্বাস আল্লাহর সাথে শিরকের নামান্তর। মোটকথা, হুজুর শব্দটি সম্মানসূচক বটে তবে এটি এমন কোনো শব্দ নয়, যা শুধু রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ব্যবহৃত
হয়। বরং তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত
একটি শব্দ।
সুতরাং
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর বিশ্লেষনে এ অর্থে হুজুর
শব্দের ব্যবহারে কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিকভাবে
বোঝার তৌফিক দান করুন।
পরিশেষে- আমাকে সাহায্য করার জন্য আমার ওস্তাদগণ ও ইলমে
দ্বীন শিক্ষারত বন্ধুগণ এবং মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রেফারেন্স-
ü গিয়াসুল
লুগাত
১৭৪;
ü ফীরুযুল
লুগাত
৫৭১;
ü ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৩/৩৪২
ü বাংলা অভিধান (পৃ. ১২১২)
ü সংসদ বাংলা অভিধান (পৃ. ৭২৩)
ü অনলাইন ভিত্তিক অভিধান ebanglalibrary.com
ü আমার ওস্তাদগণ।